সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন
আগুনে পুড়ে মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকুও হারিয়েছেন কড়াইল বস্তির বাসিন্দারা। ধ্বংসস্তূপের মাঝেই এখন কান্না আর হাহাকার। বুধবার সন্ধ্যায় কড়াইল বস্তির পোড়া ভিটায় দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছছিলেন বিধবা নারী শ্যামলী বেগম। পোড়া আবর্জনার ভেতর ছেলের জমানো কিছু টাকা আর আসবাবপত্র খুঁজতে খুঁজতে তিনি বললেন, ‘এখানেই আমার ঘর ছিল। সব শেষ হয়ে গেছে। পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই বাঁচেনি।’
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দেড় হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন হাজারো মানুষ।
বাসিন্দারা জানান, আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে তাঁরা কোনো মূল্যবান সামগ্রী বা আসবাব বের করার সুযোগ পাননি। অনেকেই ঘরে রাখা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ সব হারিয়েছেন লেলিহান আগুনে।
নাপিতের কাজ করেন রিপন মিয়া। তিনি ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে খুঁজছিলেন তাঁর জমানো টাকা। জানান, ঋণ পরিশোধের জন্য ক্যাশবাক্সে রাখা টাকাসহ তাঁর দোকান ও আশপাশের ৩০টি ঘর আগুনে পুড়ে শেষ হয়েছে। কেবল কিছু পোড়া কয়েন মিলেছে।
আরও করুণ অবস্থা স্বামীহারা আদরী বেগমের। সামান্য আয়ে ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করান। তিনি বলেন, ‘৭ হাজার টাকার ঘরভাড়া, ছেলের পড়াশোনা—সব মিলিয়ে কোনো রকমে চলি। আগুনে ঘরের সব শেষ হয়ে গেছে। নতুন কিছু কেনার সামর্থ্য নেই।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বউবাজারের ‘ক’ ব্লকের মিন্টু মিয়ার বাড়ি থেকেই আগুনের সূত্রপাত। কেউ বলছেন সিলিন্ডার লিকেজ। তবে মিন্টু মিয়ার মেয়ে আসমা আক্তার বলেন, বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে, পরে তা সিলিন্ডারে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় আসমার মা হোসনে আরা ধনী এখনও নিখোঁজ।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার জানান, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, গৃহহারা মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি। রান্না করা খাবার, পানি ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে মাথার ওপর ছাদহীন মানুষের চোখে-মুখে এখনো স্পষ্ট অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কের ছাপ।
You must be logged in to post a comment.